মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট :

মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। এ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের একটি শহর দখল করেছে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি। তারা একই সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বেশ কিছু চৌকিও দখলে নিয়েছে। এর ফলে বৃহস্পতিবার রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) প্রধান মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান।

বিজিবি সদরদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, এ সময় তিনি বান্দরবান, পালংখালি, টেকনাফ ও কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিজিবিকে পাচারের হুমকির বিষয়ে উচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন। এ খবর দিয়েছে মিয়ানমারের অনলাইন দ্য ইরাবতী।

এতে আরও বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে মিয়ানমারে জ্বালানি, রান্নার তেল এবং খাদ্য পাচার বৃদ্ধির বিষয়ে বুধবার কক্সবাজারে প্রশাসনিক অফিসে বিশেষ মিটিং হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কালাদান নদীর তীরে অবস্থিত দক্ষিণ চিন রাজ্যের পালেতোয়া শহর রোববার দখল করেছে আরাকান আর্মি। ভূমিবেষ্টিত ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলকে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে কালাদান নদী বরাবর নয়া দিল্লি সমর্থিত একটি অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, মিয়ানমারের পশ্চিমে পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা। একই সঙ্গে খাদ্য সংকটের বিষয়েও পর্যাবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের স্থানীয় একটি পত্রিকা বৃহস্পতিবার বলেছে, ৭৬৩৬ লিটার অকটেন, ১৩৬ লিটার ডিজেল এবং ৩৭৫২ লিটার সয়াবিন তেল মিয়ানমারে পাচারকালে সন্দেহভাজন ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা মিয়ানমারে বৃদ্ধি পাওয়ায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াইকে দায়ী করা হয়েছে।

বিশেষ করে রাখাইন রাজ্য ও পালেতোয়া রাজ্যে এই সংঘর্ষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কক্সবাজারে ডিসি মুহাম্মদ শাহিন ইমরান তেলের পাম্প মালিক এবং ব্যবসায়ীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন জ্বালানি এবং রান্নার তেলের যে বেচাবিক্রি সে সম্পর্কে তার প্রশাসনে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে রিপোর্ট দিতে।

কক্সবাজারের একজন কর্মকর্তা দ্য ইরাবতীকে বলেছেন, বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারের চেয়ে ৬ থেকে ৭ গুন দামে জ্বালানি বিক্রি হচ্ছে মিয়ানমারে। এ জন্য সেখানে এসব পাচার করে বিপুল পরিমাণের লাভ অর্জন করছে বাংলাদেশি বোটচালকরা।

ওদিকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বাংলাদেশে বসবাসরত জনগণ আশঙ্কা করছেন আবারও শরণার্থীর ঢল নামতে পারে। রাখাইনে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর এসব লড়াইয়ের প্রভাবে তারা দেশান্তরী হতে পারেন। বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন দ্য ইরাবতীকে বলেছেন, মিয়ানমারে যা-ই ঘটুক না কেন বাংলাদেশের উচিত হবে না আর কোনো শরণার্থীকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া।

তিনি আরও বলেন, আরাকান আর্মির উচিত এটা নিশ্চিত করা যে, এই লড়াইয়ে যেন রোহিঙ্গারা আক্রান্ত না হন।

ওদিকে অধিকার বিষয়ক সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যজুড়ে মানবিক সহায়তায় ক্রমবর্ধমান হারে বিধিনিষেধ দিয়েছে সামরিক জান্তা। এর মধ্যে আছে রোহিঙ্গা ও কামান মুসলিমদের অন্তর্বর্তী ক্যাম্পও। নভেম্বর থেকে এ ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, সামরিক জান্তার সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে।